স্টাফ রিপোর্টার॥ দেশ স্বাধীনের আগ থেকেই বাবা ছিলেন চেয়ারম্যান। চাচাও চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন। নিজেও জনসেবায় নিয়োজিত চেয়ারম্যানের আসনে ছিলেন একাধিকবার। বলছি তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহব্বত আলী সরদারের কথা। যিনি জনসেবাকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে হয়েছিলেন নগরঘাটাবাসীর আস্থাভাজন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাবা মরহুম আব্দুল বারী সরদার ছিলেন নগরঘাটার চেয়ারম্যান। তিনি মুসলিম লীগের একজন নেতাও ছিলেন। দুই ভাই দুই বোনের সবার বড় ছিলেন মরহুম আব্দুল বারী সরদার ও করিমননেছা বেগম দম্পতির পুত্র মোঃ মহব্বত আলী সরদার। তার অপর ভাই বর্তমানে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন। আর তিনি করেছেন জনগনের সেবা। ১৯৭২ সালে আততায়ীর গুলিতে বাবা সহীদ হওয়ার পর তার চাচা আব্দুর রউফও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ৯০’র গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহনের পর জড়িয়ে পরেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শের সাথে। এর পর ২০০৩ থেকে টানা ২০১৬ সাল পর্যন্ত নগরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ২০১৬ এর দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপুর সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে থেকেই বে-আইনী অস্ত্রের মুখে তাকে তার বাড়িতে জিম্মি করে ভোট ডাকাতি করে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সীদ্ধান্তে নির্বাচনে যাননি তিনি। ফ্যাসিবাদি সরকার পতনের লড়াইয়ে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন মহব্বত আলী। ফ্যাসিবাদি সরকার পতনের পর থেকেই পলাতক আছে সন্ত্রাসী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপু। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সকল কাজে বিঘ্ন’র সৃষ্টি হচ্ছে। তবে নগরঘাটাবাসী আশায় বুক বেঁধেছে এবার ভোট হলেই তাদের কাঙ্খিত প্রার্থী মোঃ মহব্বত আলী সরদারকে পুনরায় চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করবেন।
উচ্চ শিক্ষিত মহব্বত আলীর শিক্ষা জীবন শুরু করেন, নগরঘাটা কালিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এরপর নলতার খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক ও কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে আইএ পাশ করেন। এরপর কলারোয়া সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮৭ সাথে বিএ পাশ করেন। তখন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি কম বরাদ্দ পেয়েও এলাকায় করেছিলেন অনেক উন্নয়ন। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন বহু কালভার্ট, ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। সংষ্কার করেছেন অনেক স্কুল। ৩২টি মসজিদের ছাদসহ অন্যান্য উন্নয়নে রেখেছেন অবদান। এছাড়াও নিজ এলাকায় ৩৭০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন। আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় আসাননগরে তৈরি করে দিয়েছেন ঘর।
ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট থেকে তিনি সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষকে রক্ষার জন্য শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কোন সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করতে দেননি তিনি। প্রতিনিয়তই তাদের এলাকায় গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নিয়েছেন কঠোর ব্যবস্থা। সম্প্রতি বেতনার ভাঙনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় নগরঘাটা ইউনিয়ন। এ এলাকা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় নদীর পানি ঢুকে সাধারণ মানুষের ঘের ডুবে যায়। আর্থিক ক্ষতি হয় অনেক। ক্ষতি দ্রুত কমিয়ে আনতে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তার জন্য তিনি নগরঘাটার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে নিয়ে বাঁধের পানি বন্ধে দিন রাত পরিশ্রম করেন। এ বিষয়ে তিনি জানান, ‘ লাবসা ইউনিয়নের মনিরুল মেম্বার ও নগরঘাটার বিশ্বনাথ মেম্বারসহ পানি উন্নয়নবোর্ডের কর্মকর্তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে পানি বন্ধে। তাদের অবদানে তিনি কৃতজ্ঞ।’
কথা হলে নগরঘাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহব্বত আলী সরদার জানান, ‘মানুষের সেবা করতে করতেই এ পর্যন্ত এসেছি। জনগন আবারও আমায় নির্বাচিত করলে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নগরঘাটা গড়তে পদক্ষেপ নিব। নগরঘাটার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকরী ব্যবস্থা নিব। আগের মতোই মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংষ্কারে বিশেষ উদ্যোগ নিবো। সর্বপরি শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে সবাইকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।’