বটিয়াঘাটা খাদ্য গুদামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মিলার ও ডিলারদের জিম্মি করে কোটি টাকার কমিশন আদায়ের পরিকল্পনা – দৈনিক সাতক্ষীরা সংবাদ

বটিয়াঘাটা খাদ্য গুদামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মিলার ও ডিলারদের জিম্মি করে কোটি টাকার কমিশন আদায়ের পরিকল্পনা

লেখক/প্রতিবেদকঃ SatkhiraSangbad
প্রকাশঃ জুন ২৪, ২০২৫

শহিদ জয়, যশোর ॥ খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার খাদ্য গুদামে চলতি বোরো মৌসুমে চাল ও ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর মিলারদের মাঝে কার্যত কোনো আগ্রহ বা উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সাবরিনা ইয়াসমিন কর্তৃক মিলারদের নিকট উচ্চ হারে অনৈতিক কমিশন দাবি করার কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এবারের বোরো/২৫ মৌসুমে বটিয়াঘাটায় সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য মিলারদের ডেকে ওসিএলএসডি সাবরিনা ইয়াসমিন প্রতি কেজি চালে ৩ টাকা করে কমিশন দাবি করেছেন, যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, এসব টাকা আদায়ের প্রক্রিয়ায় তাকে সহযোগিতা করছেন উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা (টিসিএফ) বাদল কুমার বিশ্বাস। মিলাররা জানান, ওসিএলএসডি অফিসে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। চালের মান অযথা খারাপ দেখিয়ে ফেরত দেওয়া হয় বা কমিশনের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক মিলার কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এদিকে বটিয়াঘাটা উপজেলার দুই ওএমএস ডিলার — মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ (প্রোপ্রাইটর: সাধন বিশ্বাস) ও খান এন্টারপ্রাইজ (প্রোপ্রাইটর: মো. মিল্টন খান) — দৈনিক ২ মে. টন চাল বরাদ্দ পেয়ে থাকলেও, অভিযোগ রয়েছে তারা বাস্তবে প্রতিদিন মাত্র ৫০০ কেজি করে চাল দোকানে বিক্রি করে, বাকি ৫০০ কেজি করে (মোট ১ মে. টন) ওসিএলএসডির মাধ্যমে গুদামে ফের বিক্রি করে দেন। এতে করে সরকার একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অপরদিকে গুদামে অবৈধভাবে ৫০ মে. টনের বেশি অতিরিক্ত চাল সঞ্চিত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব অতিরিক্ত চালকে ‘সংগ্রহকৃত নতুন চাল’ হিসেবে দেখিয়ে মিলারদের নামে বিল তৈরি করে বিল পরিশোধের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের প্রক্রিয়া চলছে। এই অবৈধ চাল প্রতি কেজিতে ৯ টাকা লাভ ধরে প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা ওসিএলএসডির ব্যক্তিগত পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, কাবিখা, জিআর, টিআর ইত্যাদি প্রকল্পের চাল গুদাম থেকে না ছাড়িয়ে পুরনো মজুদ চাল ‘সংগ্রহ চাল’ হিসেবে দেখিয়ে তা বিক্রি করে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নতুন সংগ্রহে ব্যবহৃত ক্যালেন্ডার বস্তা বাইরে বিক্রি করেও মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছেন তিনি। ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়াতেও রয়েছে চরম অনিয়ম। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান না কিনে কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হয়। এবারের মৌসুমে ধানের ক্ষেত্রেও প্রতি কেজিতে ৩ টাকা হারে কমিশন দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত মান অনুযায়ী প্রতিটি বস্তায় ৩০ কেজি ৩১৪ গ্রাম (বস্তাসহ) নেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ওসিএলএসডি ২৯.৮০০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৩০ কেজি বস্তাসহ গ্রহণ করছেন। এই অতিরিক্ত ৩১৪ গ্রাম হ্রাস করে প্রতি বস্তায় গড়ে ৩০০-৫০০ গ্রাম চাল কম নিয়ে মিলারদের থেকে নগদ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ২ হাজার মে. টন চাল সংগ্রহে প্রায় ৬৬ হাজার বস্তায় প্রায় ২৬ মে. টন চালের নগদ অর্থ ওসিএলএসডির পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সবশেষে, নিচু মানের চাল, লাল দানা ও অধিক আর্দ্রতা যুক্ত চালও সংগ্রহ করে বিল আদায় করে চলেছেন তিনি। খাদ্য গুদামের সব কার্যক্রমে খাদ্য কর্মকর্তা বাদল কুমার বিশ্বাস সরাসরি সহায়তা করছেন বলে অভিযোগটি আরও জোরালো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগী মিলার, ডিলার ও সচেতন মহল। এই বিষয়ে বটিয়াঘাটা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সাবরিনা ইয়াসমিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাই সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ঘটনাও অস্বীকার করে বলেন এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। কথা হয় বটিয়াঘাটা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাদল কুমার বিশ্বাসের সাথে তিনি বলেন এই ধরনের ঘটনা কোন সত্যতা নেই, তিনি সরাসরি তার অফিসে এসে যোগাযোগ করতে বলেন। তিনি বলেন এসব ঘটনা ভুয়া মিথ্যা। মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি খুলনার ডিসি ফুড কাজী সাইফুদ্দিন। তাকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে কথা হয় আর সি ফুড ইকবাল বাহার চৌধুরীর সাথে কথা  হলে তিনি বলেন ডিলার বা মিলাররা কেউ কোন অভিযোগ দিলে তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যেহেতু অভিযোগ কেউ দেইনি তারপরও আমি বিষয়টা খতিয়ে দেখব। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন।